Before You Buy a Mutual Fund, Read This First! - JobTob
মিউচুয়াল ফান্ড: বিনিয়োগের সঠিক পদ্ধতি এবং সঠিক পরিকল্পনা
কিছু বছর আগেও "Mutual Fund" শব্দটি শুনলেই সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালিদের মনে একটা দ্বিধা তৈরি হত। বিনিয়োগের এই পদ্ধতি নিয়ে অনেকের মনেই ছিল সন্দেহ ও ভয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আর্থিক জ্ঞান বেড়েছে এবং বিনিয়োগের ধারণাও বদলেছে। আজকের দিনে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু কিছু মানুষ আবার না বুঝেই Mutual Fund কিনে ফেলছেন, যা ঠিক নয়। বিনিয়োগ সবসময় পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক হওয়া উচিত।
যে কেউ যদি সঠিক উদ্দেশ্য ছাড়াই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন, তাহলে হয়তো দেখা যাবে, লাভ তো দূরের কথা, অনেক সময় মূল টাকাটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই বিনিয়োগের আগে সঠিক উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা জরুরি। সঠিক লক্ষ্য থাকলে উপযুক্ত Mutual Fund বেছে নেওয়াটাও সহজ হয়ে যায়।
Mutual Fund কী?
মিউচুয়াল ফান্ড হলো একটি বিনিয়োগ প্রকল্প, যেখানে বহু বিনিয়োগকারীর অর্থ একত্রিত করে একটি তহবিল (ফান্ড) গঠিত হয়। এই তহবিলটি পেশাদার ফান্ড ম্যানেজারদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা বিভিন্ন শেয়ার, বন্ড এবং অন্যান্য আর্থিক সম্পদে এই অর্থ বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগ থেকে যে লাভ হয়, তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
Mutual Fund সাধারণত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয় -
- ইক্যুইটি ফান্ড: প্রধানত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। দীর্ঘমেয়াদে বেশি মুনাফার সম্ভাবনা থাকে, তবে ঝুঁকিও বেশি।
- ডেট ফান্ড: সরকারি বন্ড, কর্পোরেট বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করা হয়। ঝুঁকি কম, তবে রিটার্নও তুলনামূলকভাবে কম।
- ব্যালান্সড ফান্ড: ইক্যুইটি ও ডেট দুই ধরনের বিনিয়োগেই এই ফান্ডের অর্থ লগ্নি হয়। ঝুঁকি ও রিটার্নের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে।
- লিক্যুইড ফান্ড: স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। দ্রুত অর্থ তুলতে পারার সুবিধা থাকে।
- ইলসিএস (ELSS): কর সাশ্রয়ী মিউচুয়াল ফান্ড। বিনিয়োগের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়, তবে তিন বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে।
কেন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন?
- বৈচিত্র্য (Diversification): Mutual Fund একাধিক শেয়ার ও বন্ডে বিনিয়োগ করে, ফলে ঝুঁকি কমে যায়। একটি কোম্পানির শেয়ার মূল্য কমলেও, অন্যান্য বিনিয়োগ থেকে লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পেশাদার ব্যবস্থাপনা (Professional Management): মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ পরিচালনা করেন অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজাররা, যারা বাজারের চলমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেন।
- সহজ বিনিয়োগ (Convenience): খুব সহজেই ব্যাঙ্ক বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে Mutual Fund এ বিনিয়োগ করা যায়।
- লিকুইডিটি (Liquidity): ওপেন-এন্ডেড Mutual Fund -এ বিনিয়োগ করা অর্থ সহজেই তুলে নেওয়া যায়।
- কর সাশ্রয় (Tax Benefit): ELSS-এর মতো কর সাশ্রয়ী স্কিমের মাধ্যমে ৮০সি ধারায় কর ছাড় পাওয়া যায়।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
বিনিয়োগের মেয়াদ: আপনি স্বল্পমেয়াদী (১-৩ বছর) নাকি দীর্ঘমেয়াদী (৫-১০ বছর বা তার বেশি) বিনিয়োগ করতে চান?
রিটার্নের প্রত্যাশা: আপনার কত শতাংশ লাভের আশা রয়েছে?
ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা: আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত?
যদি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে লিক্যুইড ফান্ড বা ডেট ফান্ড বেছে নিন। আর দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য ইক্যুইটি ফান্ড একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
ফান্ড ম্যানেজারের দক্ষতা যাচাই
ফান্ড ম্যানেজারের দক্ষতার উপর আপনার বিনিয়োগের লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে। তাই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার আগে ফান্ড ম্যানেজারের পারফরম্যান্স সম্পর্কে জেনে নিন।
আলফা সূচক (Alpha): এটি ফান্ড ম্যানেজারের সাফল্যের একটি মানদণ্ড। আলফা সূচক "পজিটিভ" হলে বুঝতে হবে, ফান্ডের পারফরম্যান্স ভালো। আর "নেগেটিভ" হলে বুঝতে হবে, ফান্ডটি প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল দেয়নি।
প্রতি তিন মাস অন্তর ফান্ডের আলফা রেটিং প্রকাশিত হয়। তাই বিনিয়োগের আগে বিগত কয়েকটি রেটিং যাচাই করে নিন।
ফান্ডের আকার ও স্থিতিশীলতা
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের আগে ফান্ডের আকার বা "Asset Under Management (AUM)" দেখে নেওয়া জরুরি। বড় আকারের ফান্ড সাধারণত বেশি স্থিতিশীল হয়, কারণ এটি এক বা দুইজন বড় বিনিয়োগকারীর উপর নির্ভর করে না। ছোট আকারের ফান্ডে বড় বিনিয়োগকারী যদি টাকা তুলে নেন, তাহলে ফান্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
খরচ ও চার্জ (Expense Ratio)
প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ডে পরিচালনার জন্য একটি খরচ থাকে, যাকে "Expense Ratio" বলা হয়। সাধারণত এটি বার্ষিক ভিত্তিতে ১-২% হতে পারে। কম খরচের ফান্ড বেছে নিন, যাতে রিটার্ন বেশি পাওয়া যায়।
পোর্টফোলিও এবং বিনিয়োগের ধরন
মিউচুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিও দেখুন। কোন কোন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেটাও জানা গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমানের শেয়ারে বিনিয়োগ করা ফান্ড তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
কিভাবে Mutual Fund কিনবেন?
- ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান: অধিকাংশ ব্যাঙ্ক মিউচুয়াল ফান্ডের পরিষেবা দেয়।
- অ্যাপ ও ওয়েবসাইট: গ্রো (Groww), কুইকো (Kuvera), জিরোধা (Zerodha) ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম থেকেও অনলাইনে Mutual Fund কেনা যায়।
- বিনিয়োগ পরামর্শদাতা: আপনি চাইলে কোনও অভিজ্ঞ আর্থিক পরামর্শদাতার কাছ থেকে সাহায্য নিতে পারেন।
সিপ (SIP) এবং লাম্প সাম বিনিয়োগ
SIP (Systematic Investment Plan): প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার পদ্ধতি। এটি বাজারের ওঠা-নামা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
লাম্প সাম (Lump Sum): এককালীন বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করা হয়। বাজার নিম্নমুখী থাকলে এটি উপযুক্ত হতে পারে।
মিউচুয়াল ফান্ডের ঝুঁকি ও সতর্কতা
- বাজারের ওঠানামা (Market Risk)
- অর্থনৈতিক পরিস্থিতি (Economic Risk)
- ফান্ড ম্যানেজারের সিদ্ধান্ত (Managerial Risk)
বিনিয়োগের আগে তথ্য ও শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ুন। কোনও ফান্ডের আগের পারফরম্যান্স ভালো মানে ভবিষ্যতেও ভালো হবে, এমন কোনও গ্যারান্টি নেই।
Mutual Fund একটি চমৎকার বিনিয়োগের মাধ্যম, যদি সঠিক পরিকল্পনা ও জ্ঞান নিয়ে বিনিয়োগ করা হয়। বিনিয়োগের আগে সঠিক গবেষণা করুন এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে বড় রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। সঠিক লক্ষ্য, সঠিক ফান্ড এবং সঠিক সময় নির্বাচন করলে মিউচুয়াল ফান্ড আপনাকে আর্থিক স্থিতি দিতে পারে।
আশা করি, এই প্রবন্ধটি আপনাকে Mutual Fund সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা দেবে এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।